ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব :
(১) করম শাহ (জন্ম- ১৭১০ খ্রীঃ , মৃত্যু ১৮১৩ খ্রীঃ):করম শাহর বিশাল কর্মময় জীবন শেরপুর ও সুসঙ্গ পরগনায় অতিক্রান্ত করেন। শেষ জীবনে আবাস স্থাপন করেন সুসঙ্গ পরগনার পূর্বধলার লেটিরকান্দা গ্রামে। তিনি পাগলপন্থী মতাদর্শের জনক। করম শাহর পিতা ছিলেন সেরআলী গাজী যিনি সেরপুর পরগনার জমিদার ছিলেন। ৯৯৪ বঙ্গাব্দে সেরপুরের পূর্ব কাচারীবাড়ী দর্শা গ্রামের কননগু রমাবল্লব নন্দীকে হত্যার অপরাধে সের আলী গাজীকে জমিদারী চ্যুত করা হয়েছিল। সে সময় অবশ্য সেরপুরের নাম ছিল দশকাকনীয়া। পরে হিন্দু জমিদারদের ষড়যন্ত্রেই সের আলী গাজী নিহত হয়ে ছিলেন। অসহায় অবস্থায় মায়ের সঙ্গে কিছু দিন যাপন করেন। পরে সুসঙ্গ পরগনার শংকরপুর নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। তিনি সুফীবাদের অনুসারী ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক তাকে ধর্ম সংস্কারক ও ভবিষৎ দ্রষ্টা বলেও অখ্যায়িত করেছেন । ১৭৭৫ খ্রীস্টাব্দে করম শাহ তার আবাস স্থানান্তর করে বর্তমান পূর্বধলার লেটিরকান্দায় নিয়ে আসেন। একই সাল থেকে করম শাহ গারো পাহাড় অঞ্চলের উপজাতিদের সাম্যমূলক পাগলপন্থী মতবাদে দীক্ষা দিতে থাকেন । ১৭৮৬ সাল থেকে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সেরপুর পরগনায় জমিদার তথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
করম শাহর বাল্যনাম ছিল চাঁদ গাজী। জমিদার তথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তিনি নিজেকে করম শাহ নামে পরিচিত করে তোলেন। কোথাও কোথাও তাকে করিম শাহও বলা হতো। ১৮১৩ খ্রীস্টাব্দে তিনি নিজবাড়ী লেটিরকান্দায় মৃত্যু বরণ করেন। নিজ বাড়ীর আঙ্গীনাতেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
(৩) টিপু শাহ ওরফে টিপু পাগলা :(জন্ম -? , মৃত্যু মে ১৮৫২ খ্রীঃ) পাগলপন্থীর জনক করম শাহ-র দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান টিপু শাহ। পিতার উত্তরসূরী হিসেবে টিপু পাগলা পাগলাপন্থী মতবাদ প্রচার শুরু করেন। ১৮১৩ খ্রীঃ করম শাহ-র মৃত্যুর পর পিতার প্রবর্তিত মতবাদের উত্তরাধিকার টিপু পাগলার উপর বর্তায়। এ নিয়ে বৈমাত্রিয় ভাই ছপাতি শাহ-র সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ছাপাতি শাহর পুত্র খাইস্যা মিয়া টিপু কে হত্যার চেষ্টাও করে। কিন্তু শিষ্যদের কাছে টিপু শাহ-র খুব গ্রহণ যোগ্যতা ছিল। টিপু শাহ-র পিতার মতবাদ ও পিতামহের হারানো সেরপুরের জমিদারী উদ্ধারে কথা মনে লালন করতেন।
শেরপুরের জমিদারদের শরিকী বিবাদ ও কৃষক প্রজাদের উপর উত্তরোত্তর খাজনা বৃদ্ধি টিপুর মনোবাসনা পূরনের সুযোগ এনে দিয়ে ছিল। ১৮০২ খ্রীস্টাব্দ থেকেই সেরপুর পরগনার ও সুসঙ্গ পরগনার কৃষক ও উপজাতিদের মাঝে ব্যাপক জাগরণ শুরু হয়েছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮২৪ খ্রীস্টাব্দে জামালপুর শেরপুর ভায়া সুসঙ্গের দিকে রাস্তা নির্মান হচ্ছিল। রাস্তায় মাটি কাটার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল হদি সম্প্রদায় ও পাগলপন্থীদের। সুযোগ বুঝে টিপু হদিদের বুঝাতে পেরেছিলেন, মাটি কাটার কাজ করবে সেরপুরের কয়দীরা। কিন্তু হদিদের দ্বারা মাটিকাটার কাজ করানো তে তাদের জাত যাচ্ছে। হদিরা যুক্তি মেনে বিদ্রোহ করলো মাটিকাটবেনা। এভাবেই হদিদের মাঝে নিজের নের্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন নেন টিপু পাগলা। হদিরাও টিপুর নের্তৃত্ব মেনে নেয়। রায়ত প্রজারা জমিদারদের মাত্রাতিরিক্ত খাজনা অত্যাচার ও উৎপীড়নের হাত থেকে উদ্ধারের পথ অন্বেষনে ছিল। তাই ১৮২৫ পাগলপন্থী মতাদর্শীরা ১৮২৫ খ্রীস্টাব্দেই বিদ্রোহের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেচেঁ নেয়। টিপু পাগলের রাজনৈতিক চালে পূর্বধলার লেটির কান্দায় এক সভা হয়। সে সভায় কৃষক প্রজারা ঘোষণা করে-টিপুর পূর্ব পুরুষ ছিল সেরপুরের জমিদার,তাই বর্তমানেও টিপু তাদের সুলতান । বিদ্রোহ ক্রমে তুঙ্গে, উঠে ৮ জানুয়ারী ১৮২৫ খ্রীস্টাব্দে। প্রজারা জমিদারদের খাজনা না দিয়ে টিপুর নামে সুলতানী ও তার মা’র নামে শির্নী পাঠাতে শুরু করলো । ৮ জানুয়ারী ১৮২৫ থেকেই সেরপুরের জমিদারদের বাড়ীতে ধন- সম্পদ রর্থে সৈন্য মোতায়েন ছিল। ১৯ জানুয়ারী ১৮২৫ খ্রীস্টাব্দে সেরপুরের জমিদার বাড়ীতে বিদ্রোহী প্রজারা আগুন ধরিয়ে দেয় ও ধন সম্পদ লুটে নেয়। এতে জমিদাররা ভীত হয়ে শেরপুরের মৃগী নদীর উত্তর তীরে কালীগঞ্জে ম্যাজিষ্ট্রেট ড্যাম্পিয়র এর কাচারী বাড়ীতে আশ্রয় নেয়।
এ সুযোগ টিপু শাহ পাগল ওই অঞ্চলে নূতন রাজ্য স্থাপন করে। তিনি বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগে লোক নিয়োগ করে গড় জরিপা নামক স্থানে প্রাচীর অভ্যন্তরে বাসস্থান করে রাজ্য পরিচালনা করেন। ১৮২৫ থেকে ১৮২৭ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত এ রাজ্য পরিচালিত ছিল। ১৮২৭ খ্রীস্টাব্দে রাধাচরন দারোগা ১০ জন বরকন্দাজসহ গড় জরিপায় প্রবেশ করে টিপু শাহ পাগল কে কৌশলে গ্রেফতার করে। বিচারে ময়মনসিংহের সেসন জজ টিপু পাগলাকে যাবজ্জীবন কারা ভোগের রায় দেয়। সেই কারাভোগ অবস্থায় ১৮৫২ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ জেল খানায় টিপু পাগলার মৃত্যু হয়।
পূর্বধলার লেটিরকান্দায় পিতা করম শাহর সমাধির পাশে টিপু পাগলাকে সমাহিত করা হয়েছিল।
(৪)ছপাতি শাহ : পাগলপন্থীর জনক করম শাহ্ প্রথম পুত্র ছিলেন ছপাতি শাহ। তিনি গারো পাহাড় অঞ্চলে গারোদেরকে তাঁর শিষ্য করে ছিলেন। ১৮০২ খ্রীস্টাব্দে নাসিরাবাদ জেলা কালেক্টর লি. গ্রোসের নিকট গারো পার্বত্য অঞ্চলটি জমিদারদের হাত থেকে মুক্ত করে পৃথক একটি জেলায় পরিণত করে রাজস্ব আদায়ের ভার গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। এটা ছিল তার গারো পাহাড় অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য স্থাপনের প্রয়াস। কিন্তু কালেক্টর লি. গ্রোস রাজী হলেও গর্ভনমেন্ট তার প্রস্তাব স্বমূলে প্রত্যাখ্যান করেন। যারফলে ব্যার্থ হয়েছিল তার নতুন রাজ্য স্থাপনের পরিকল্পনা।
(৫)লাল মামুদ সরকার :পূর্বধলা উপজেলার বাবইডহর গ্রামে লাল মামুদ সরকার জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মুসলিম হয়েও গীতা, মহাভারত রামায়ন, চৈতন্য চরিতামৃত, শ্রীমদভাগবদ অধ্যায়ন করতেন। তিনি হিন্দু ও বৈষ্ণঠাদর্শ চর্চা করে বৈষ্ণব আচার গ্রহণ করেছিলেন। লাল মামুদ সরকার ছিলেন মুলত করিয়াল, কীর্ত্তনীয়া গাইনের গীতের গীতালূ। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে ময়মনসিংহের সৌরভ পত্রিকায় তার উপর বিজয় আচার্য এক নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। লাল মামুদ ১৩১০ বঙ্গাব্দে আনুমানিক ৪০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তার অনেক গন কবিতায় অসাম্প্রদায়িক চেতনা আছে।
সমসাময়িক ব্যক্তিত্বঃ
১. হাজী আমির উদ্দিন মুন্সী :পূর্বধলা উপজেলার খলিশাপুর গ্রামের বন্দেরপাড়ায় হাজী আমির উদ্দিন মুন্সীর জন্ম। তিনি বাউল সাধক, গায়ক ও পুঁথি লেখক ছিলেন। তার রচিত বাহাদুর খাঁ পুঁথিটি তৎকালীন সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। পুঁথিটি বিংশ শতাব্দির চারের দশকে রচিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
২. মৌলানা মিরাস উদ্দিন :পূর্বধলা উপজেলার খলিশাপুর পূর্বপাড়া গ্রামে উনবিংশ শতাব্দীতে মৌলানা মিরাস উদ্দিনের জন্ম। তিনি পুর্বধলা জগৎমণি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন। মৌলানা মিরাস উদ্দিন ধর্মীয় শিকতার পাশাপাশি বাউল সাধনা ও বাউল গান গাইতেন। তার অসংখ্য গান আজো জনপ্রিয়। স্থানীয় ভাবে তাঁর সাধক পুরুষ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। প্রতি বছর তার মাজার কে কেন্দ্র করে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়।
৩. নজমুল হুদা :পূর্বধলা উপজেলার মনারকান্দা গ্রামে ১৯২৯ সালে নজমুল হুদা জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬১ সাল থেকে তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নজমুল হুদা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন। তিনি কলকাতাসহ দেশের অনেক মঞ্চে অভিনয় করেছেন।
৪. মৌলভী আব্দুল হামিদ খান :খলিশাপুর খানপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণকারী মৌলভী আব্দুল হামিদ খান। তিনি ভারতের দেওবন্ধ থেকে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। তিনি খলিশাপুর ইউনিয়নের দীর্ঘ ২২ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। মৌলভী আব্দুল হামিদ খান খলিশাপুর নিউস্কীম মাদ্রাসা ও ১৯৩৫ সালে খলিশাপুর জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
৫. নয়ন মিয়া :পূর্বধলা সদরে ১৩২৬ বঙ্গাব্দে নয়ন মিয়া জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন যাত্রা ও থিয়েটার মঞ্চের প্রখ্যাত অভিনেতা। কলকাতা থেকে শুরু করে সারাদেশের যাত্রা মঞ্চে তিনি অভিনয় করে খ্যতি লাভ করেছেন। অনেক মঞ্চে অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছেন। নবাব সিরাজের চরিত্র রূপায়ন করে তিনি নাট্যসম্রাট খ্যাতি লাভ করে ছিলেন।
৬. সাদির উদ্দিন আহমেদ :পূর্বধলা উপজেলার ভুগী গ্রামে সাদির উদ্দিন আহমেদ জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে এল.এল.বি ডিগ্রী গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি এম.এন.এ, ১৯৭৩ সালে এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাদির উদ্দিন আহমেদ ১৯৭২ সালে সংবিধান কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি এখনো নেত্রকোণায় বিশিষ্ট্য আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।
৭. মাহবুব তালুকদার :পূর্বধলা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামে ১৯৪১ সালে মাহবুব তালুকদার জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকাবিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে অনার্স, ১৯৬২ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবনে মাহবুব তালুকদার মহামান্য প্রেসিডেন্টের স্পেশাল অফিসার, মহা পরিচালক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, প্রধান সম্পাদক বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২২টি তিনি টেলিভিশন নাটকের নাট্যকার ও চলচিত্রের কাহিনীকার হিসেবে সারা দেশে খ্যাতি লাভ করে ছিলেন। সরকারী খরচে তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন।
৮. কর্ণেল আবু তাহের (বীররোত্তম):পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে ১৯৩৮ সালে কর্ণেল আবুতাহের (বীররোত্তম) জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদেন। কর্ণেল আবু তাহের মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টেরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে কামালপুর যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পাক সেনাদের সেলের আঘাতে তিনি একটি পা হারান। চিকিৎসা শেষে ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেল নিয়োগ পান। একই বছর জুন মাসে ৪৪ তম ব্রিগেডের অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। সে সময় তিনি প্রচলিত ব্যারাক আর্মির স্থলে পিপলস আর্মিগড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। জাতীয় সেনাবাহিনী সম্পকীত নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয়। ১৮৭২ সালের সেপ্টেবরে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭২ সালে অক্টোবর মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে নির্মম হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের কারণে সাধারণ সেনাদের মাঝে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সে প্রোপটে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে আবু তাহের সিপাহী জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। একই বছর ২৪ নভেম্বর গ্রেফতার হন। কারাগারে আটক অবস্থায় সাময়িক ট্রাইবুনালের বিচারে তাঁর মৃত্যুদন্ড হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। কর্ণেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ন অবদানের জন্য বীররোত্তম উপাধিতে ভুষিত হয়েছিলেন।
৯. এম. আর. খান :পূর্বধলা উপজেলার ভিকুনীয়া গ্রামে ১৯০৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এম. আর. খান । পাট ব্যবসায়ী হিসেবে তৎকালীন সময়ে তারঁ খ্যাতি ছিল। তিনি বাংলাদেশের পাট ব্যবসায়ীদের পথিকৃৎ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এম.আর. খানের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। তিনি বিদেশে চা রপ্তানী করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রশস্থ করেছিলেন। ময়মনসিংহ শহরে তিনি তার মা’র নামে মুমিনুন্নিছা মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া অনেক সামজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে এলাকায় প্রশংসা অজর্ন করেছিলেন। এম.আর খানের প্রকৃত নাম মজুতুর রহমান খান।
১০. এডভোকেট মোশারফ হোসেন : লাউখাই, পূর্বধলা, নেত্রকোণা। তিনি ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১১. প্রিন্সিপাল সিরাজুল ইসলাম :ধলা যাত্রাবাড়ী, পূর্বধলা, নেত্রকোণা। তিনি পূর্বধলা ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১২. ডা. মোহাম্মদ আলী :বাড়হা , পূর্বধলা, নেত্রকোণা। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি দলদলা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্বধলা রাবেয়া আলী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।
১৩. মুহ. আব্দুল হাননান খান :খলিশাপুর, পূর্বধলা, নেত্রকোণা। তিনি ১৯৬১ সালে শিক্ষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ মহুকুমা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে ছয় মাস কারাভোগ করেন। ১৯৭২ সালে পুলিশ বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চারনেতা হত্যার মামলাসহ দেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যার মামলার তদারকী কর্মকর্তা ছিলেন। শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রতিষ্ঠাতা।
১৪. দেবদাস জোয়ারদার :পূর্বধলা উপজেলার কালীহর গ্রামে ১৯৩৪ খ্রীঃ দেবদাস জোয়ারদারের জন্ম । তিনি পূর্বধলার ঘাগড়া ও সাধুপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরে যাদবপুর বাস্তহারা বিদ্যাপীট থেকে ম্যাট্রিক, বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এ, প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি.এ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। দেবদাস জোয়ারদার কলকাতার মাওলানা আজাদ কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তিনি রবীন্দ্র চর্চা ভবনের রবীন্দ্র সাহিত্যের অবৈতনিক শিক্ষক ছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ, তোমার সৃষ্টির পথে, রবীন্দ্রনাথের চিত্রা বেশ পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছিল।
১৫. মনির উদ্দিন সরকার :পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামে ১৯৩৫ সালে মনির উদ্দিন সরকার জন্মগ্রহণ কররেন। তিনি এন.জারিয়া ঝান্জাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করে ছিলেন। ২০০০ সালে স্কাউটের সর্বোচ্চ এ্যাওয়ার্ড, ২০০১ সালে স্কাউটের শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষক নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। মনির উদ্দিন সরকার ২০০২ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত স্কাউট সমাবেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস